মঙ্গলবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৩

দুঃখিত

অনেকদিন পর ব্লগ লিখছি। এক বছর তো হবেই। ভেবেছিলাম লিখবনা আর। কিন্তু আশেপাশে যখন খুব খারাপ কিছু হতে দেখছি তখন না লিখে পারলাম না। আমাদের দেশের মেয়েরা অন্তত এই একটা ক্ষেত্রে হয়ত সঠিক অর্থে "স্বাধীনতা" পায়।

পত্রিকা না পরলে আর খবর না দেখলে অনেক বিষয় সম্পর্কে জানা হয়না, রোজকার খবর না জানলে তুমি আপডেট থাকবে কিভাবে? চাকরির ইন্টার্ভিউ তে আটকে যাবে তো! এসব কথা নিত্যদিন শুনতাম কিন্তু তাও পরতে বা দেখতে চাইতাম না খবরের কাগজ বা টিভি তে কোন খবর। কারন একটাই, খারাপ খবর দেখতে বা শুনতে কার ই বা ভালো লাগে। কিন্তু খারাপ খবর চাইলেই কি আর এড়ানো যায়... !!!

দিল্লীতে ধর্ষণ এমনি একটি খবর। মেডিকেলের ছাত্রী ছিল দামিনী। বয়স মাত্র ২৩/২৪ বছর হবে। রাত ১০ টার দিকে ভালবাসার মানুষটির সাথে হলে ছবি দেখে ফিরছিল। বাসার দিকে কোন রিকশা বা অটো না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাসেই উঠতে হয় তাদের। তখন বাসে ওরা ছাড়াও ৮ জনের মত ছিল। ৬ জন নেশাগ্রস্থ ছেলে আর বাসের চালক আর কন্ডাক্টর (সম্ভবত)। একসময় ওই ৬ জন ছেলে মেয়েটিকে খারাপ উক্তি করলে তার বয়ফ্রেন্ড প্রতিবাদ জানায় আর বাস থেকে নেমে যেতে চায়। কিন্তু বাস থেকে নামতে দেয়া হয়না তাদের। উপরন্তু ছেলেটাকে মারধোর করা হয়। আর মেয়েটাকে ৬ জন মিলে পর্যায়ক্রমে রেপ করে ছেলেবন্ধুটার সামনেই। এরপর একসময় বাস থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় তাদের রাস্তায়। মেয়েটা বিবস্ত্র ছিল। অনেক্ষন পর্যন্ত কেও তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি, হয়তো ভয়ে, হয়তোবা বা সঙ্কোচে। অবশেষে নেয়া হয় হসপিটালে, অবস্থার অবনতি হওয়ায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে পাঠানো হয় মেয়েটাকে। কিন্তু এতো মানুষের দোয়া আর দাওয়ার পরও বাঁচেনা মেয়েটি। ক্ষোভে ফেটে পরে গোটা ভারতসহু আরও অনেক দেশ। সবার একটাই দাবী, বিচার চাই। কিন্তু বিচার কি সত্যিই হয়!!!... আমরা অপেক্ষায় দিন গুনি।

এবার আসা যাক আমার দেশ, বাংলাদেশের ঘটনাগুলোয়। টাঙ্গাইলে তরুনী ধর্ষিত। কোন এক বিয়ের  দাওয়াতের নাম করে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যায় মেয়েটিরই এক বান্ধবী। তারপর তিন দিন ধরে ৪ জন মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। তারপর মেয়েটির অবস্থা বেগতিক দেখে ফেলে আসে এক রেললাইনের উপর। যেখান থেকে স্থানীয় লোকেরা প্রথমে গ্রামের একটি হাসপাতালে নেয়ার পর কর্মরত ডাক্তারের কথায় মেয়েটিকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল এ। ২১ দিন পর ওই ৪ জন পিশাচ ও বান্ধবীকে ধরা হয়, এখনও নাকি জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আর মেয়েটি যন্ত্রণা, লজায় এতটাই ভীত হয়ে আছে যে এখন পর্যন্ত কারো সাথে কথাই বলতে পারছেনা। আজকের পত্রিকায় এসেছে মেয়েটির কালকে রাত থেকে আবার অবস্থার অবনতি হয়েছে, ভীষণ জ্বর মেয়েটির... এই মেয়েটিকেও কি মরে যেতে হবে?? ... প্রশ্ন থাকলো সবার কাছে।

এই ঘটনার রেশ কেটে উঠতে পারলো না। আবার একি ঘটনা। বান্ধবীর সাথে সরল বিশ্বাসে বের হওয়া আরেকটি মেয়ে (কলেজছাত্রী) ধর্ষণের শিকার। সাভারের একটি মেসে ৩/৪ জন বিভিন্ন ভার্সিটিতে পড়ুয়া ছেলে থাকে। ওইখানে মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মেয়েটিকে রেখেই তার বান্ধবী চলে আসে। মেয়েটিকে প্রথমে একজন রেপ করে আর অন্য একজন ভিডিও করে। তারপর বাকিরাও পর্যায়ক্রমে রেপ করে মেয়েটিকে। এরপর মেয়েটির মার নাম্বারে ফোন করে টাকা চায় ছেলেগুলো, না দিতে পারলে ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। কিন্তু সাহসী মা থানায় জিডি করে। আটক করা হয় ছেলেগুলো আর বান্ধবীকে। কিন্তু বিচার কি হবে?

আরেকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটলো কালকে কক্সবাজারের মহছেনিয়াপাড়ায়। এক দিনমজুরের কিশোরী মেয়ে রাবেয়া বছরীকে রাতে বাসায় ঢুকে ৫/৬ জন যুবক মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে, পরে তাকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়। মেয়েটি মনে হয় বেঁচেই গেলো। অন্তত তাকে জবানবন্দি তো দিতে হবেনা, তাকে রাতদিন দুঃস্বপ্ন দেখে চমকে তো উঠতে হবেনা, তার হাসপাতালের বেডের পাশে বসে কাদের সিদ্দীকীর মতো বঙ্গবীর নিরাশার বানী শুনিয়ে বলবে না তো... এই মেয়ে যথাযথ বিচার পাবে কিনা আমার সেই বিষয়ে সংশয় আছে (টাঙ্গাইলে নির্যাতিতা মেয়েটির ব্যাপারে উক্তিতে তিনি এ কথা বলেন)।

আর আমরা ?? আমাদের মতামত কি!?...আর কিছু না হোক, আমরা প্রচন্ডভাবে দুঃখিত ! ...